রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:১০ পূর্বাহ্ন
প্রাথমিক শিক্ষা হলো উচ্চ শিক্ষার ভিত্তি। একটি জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক স্তরের আধুনিকতায় বহু আগে থেকেই শুরু হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ। তারমধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া ও ওয়াইফাই রাউটার সরবরাহ। শিক্ষার আধুনিকতায় সরকারের এ উদ্যোগ সমূহ অত্যন্ত প্রশংসার দাবীদার। যার ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে আগের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরী, আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক পাঠদান চলছে এই মাল্টিমিডিয়ার বদৌলতে। পূর্বে যেখানে চক, বোর্ড ও শিক্ষকের জ্ঞান ভিত্তিক পাঠদান করা হতো সেখানে বর্তমানে চলছে প্রযুক্তি ভিত্তিক পাঠদান যা শিশুদের নিকট অনেক আকর্ষণীয় ও বোধগম্য। বিশেষ করে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের পাঠদান এখন আর শিক্ষার্থীদের নিকট ভীতিপ্রদ না হয়ে বরং আনন্দের ও অধিক সহজ।
এক সময় পাঠদানে চার্ট, মডেল, পোস্টার, ছবি ও হাতে তৈরি বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার হতো। আজ শিক্ষকরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে পাঠদান করেন। আর এ ব্যবস্থায় পাঠদান বর্তমান সরকার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করায় সম্ভব হচ্ছে। বর্তমান সরকার সকল শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে বদ্ধপরিকর তাই প্রাথমিক শিক্ষাকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও উন্নত বিশে^র সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই প্রনয়ণ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১। শিক্ষাকে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক, কর্মমুখী, অংশগ্রহণমূলক ও কার্যকর করাই মূললক্ষ্য। এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে শিক্ষার হার ও মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত।
মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি ভিত্তিক একটি সমন্বিত বিষয়। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি ডিভাইস এতে ব্যবহার করে পাঠদান করা হয়। এর সহায়তায় ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়, প্রয়োজনের সময়তা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ব্যবহার, পরবর্তীতে আবার সম্পাদন করে তথ্য সংযোজন বা পরিবর্তন করা যায়। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে এ্যানিমেশন ব্যবহার করে কম্পিউটার, প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠের সময়তা উপস্থাপন করা যায়।
প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাল্টি মিডিয়া সরবরাহ করার পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষক তৈরি করার জন্য শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে ও সরাসরি বিভিন্ন রকম উন্নত প্রশিক্ষণ। ফলে শিক্ষকরা আইসিটি তে আগের চেয়ে অনেক দক্ষ। শিক্ষকদের মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতা বাড়ার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রতিযোগিতা ব্যাপক বেড়েছে। প্রতি বছর জাতীয়ভাবে আয়োজন করা হয় ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি প্রতিযোগিতা যা শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। প্রাথমিকের বর্তমান অনেক কাজ অনলাইনেই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে বসেই সম্পন্ন করছেন, যা স¥ার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে ইতিবাচক।
শিক্ষকরা নিজ মেধা বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত নিপুণ তান সাথে কন্টেন্ট তৈরিকরে শিক্ষক বাতায়নে আপলোড করে ডিজিটাল পাঠদানে সহায়তা করছেন। শিক্ষকরা সুন্দর ও আকষর্ণীয় এসব কন্টেন্ট ডাউনলোড করে শ্রেণি পাঠদানে ব্যবহার করতে পারছেন। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষকরা এ প্রেক্ষিতে ব্যাপক ভ‚মিকা পালন করছেন যা প্রশংসার দাবী রাখে। মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদান করায় শিশু শিক্ষার্থীরা শ্রেণিতে অনেক আনন্দ পায় ফলে কঠিন পাঠও তাদের নিকট সহজ ও বোধগম্য হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যালয় ভীতি দূর হচ্ছে এবং শিশু ভর্তি ও উপস্থিতির হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আগ্রহের সাথে প্রতিটি ¯øাইড দেখে এবং মনোযোগের সহিত শ্রেণিতে লেখাপড়া করে বোঝার চেষ্টা করে। শ্রেণি কার্যক্রম হচ্ছে অত্যন্ত ফলপ্রসু ও অংশগ্রহণমূলক। শিক্ষার্থীরা এ্যানিমেশনের মাধ্যমে আকষর্ণীয়, চিত্তাকর্ষক ছবি, ভিডিও দেখে দুর্বোধ্য বিষয়কেও সহজে আত্ত¡স্থ করতে পারছে। শিক্ষাভীতি দুর হয়ে শিক্ষাগ্রহণ এখন আনন্দের বিষয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাতে কলমে ব্যবহারিক ভাবে জ্ঞানলাভ করছে। আর এতসব সুযোগ তৈরি হয়েছে মাল্টিমিডিয়ার বদৌলতে।
বর্তমান আধুনিকযুগ তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নত জাতিরাই বিশে^ উন্নত। আমাদের শিক্ষানীতি ২০১০, জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ নীতিমালা ২০০৯, জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ এ তথ্যপ্রযুক্তিতে জোর দেয়া হয়েছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কম্পিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব, ডিজিটালাইজড উপকরণ ব্যবহার নিঃসন্দেহে শিক্ষাকে আধুনিকায়ন, যুগোপযোগী ও আর্ন্তজাতিক মানসম্মত করেছে। এ যাত্রা প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক পাঠদানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে।
বর্তমান বিশ^ায়নের যুগে উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করণে প্রযুক্তি ভিত্তিক ডিজিটাল উপকরণ ব্যবহার করে অবশ্যই পাঠদান করতে হবে।বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা লাভের জন্য প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সবার জন্য গুণগত মান সম্মত শিক্ষা অর্জনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
শিক্ষার পরিবেশ, পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু চিত্তাকর্ষক, আনন্দ ঘন হয়ে উঠেছে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কক্ষ ব্যবহারের ফলে। এতে শিক্ষার্থীরা মুখস্থ নির্ভর জ্ঞানের পরিবর্তে বিকশিত চিন্তা ও কল্পনা শক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী হয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষা স্তরের নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জন করে আধুনিক যুগের স্মার্ট নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। শিক্ষার্থীদের নান্দনিকতা, দেশাত্ববোধ, সৃজনশীলতা, বিজ্ঞান মনষ্কতা ও উন্নত জীবন গঠনের স্বপ্নে শিশুবয়স থেকেই উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে শিক্ষক কেন্দ্রিক পাঠদানের পরিবর্তে হচ্ছে শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক পাঠদান। এতে ঝরেপড়ার হার কমেছে। ভর্তি ও উপস্থিতির হার প্রশংসনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) ২০৩০ এর লক্ষ্যমাত্রা-৪ এ টেকসই, গুণগত মানসম্মত, অর্ন্তভুক্তিমূলক ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে আইসিটি শিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বিশ^ায়নের যুগে আধুনিক স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে প্রযুক্তি ভিত্তিক স্মার্ট শিক্ষাদানে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষার গুণগত মাননিশ্চিত ও পাঠদানকে আনন্দঘন এবং গ্রহণযোগ্য করতে শিক্ষকদের প্রাথমিক স্তর থেকেই মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক পাঠদান নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী।
লেখক-
মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, সহকারী শিক্ষক, চুনঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (জাতীয় পদকপ্রাপ্ত-২০১৬), কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।